আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতা। মৌলের পর্যায়বৃত্ত এই দুটি সম্পর্ক রসায়নের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্ষেপে এই দুটি বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করবো ।

ইলেকট্রন আসক্তি
গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণু প্রত্যেকে একটি করে এক মোল ইলেকট্রনের সাথে যুক্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন এক মোল একক ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে।যেমন :
A(g)+e~A-(g)+ শক্তি
ইলেকট্রন আসক্তির একক ev/atm অথবা kCal/mol অথবা, kJ/mol
নিউক্লিয়াসে চার্জ বৃদ্ধিতে ইলেকট্রন আসক্তি বৃদ্ধি পায় এটি হলো পর্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক। একটি পর্যায়ে যতোই বাম থেকে ডান দিকে অগ্রসর হওয়া যায় ততোই ইলেকট্রন আসক্তির মান বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ মান বৃদ্ধি পেতে পেতে ১৭ তম গ্রুপে গিয়ে সর্বোচ্চ হয় এবং ১৮ তম গ্রুপের মৌলের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন আসক্তির মান প্রায় শূন্য হয়ে যায়।
তড়িৎ ঋণাত্মকতা
সমযোজী বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ কোনো যৌগের অণুর মধ্যে উপস্থিত কোনো মৌলের পরমাণু বন্ধন গঠনকারী জোড়কে নিজের নিউক্লিয়াসের দিকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাকে ঐ মৌলের পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।
মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা পরিমাপের জন্য পাউলিং স্কেল ও মিলিকান স্কেল ব্যবহার করা হয়।পাউলিং স্কেলের সবোর্চ্চ মান 4 ।
মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
১. পরমাণুর আকার বৃদ্ধির ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা হ্রাস পায়-এটি হলো গ্রুপভিত্তিক সম্পর্ক
২. নিউক্লিয়াসের চার্জ বৃদ্ধিতে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায়- এটি হলো পর্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক।
৩. মৌলের জারণ অবস্থা।
৪. তড়িৎ ধনাত্মকতা।
৫. আয়নীকরণ বিভব ও ইলেকট্রন আসক্তি
৬.হাইব্রিডাইজেশন।
ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতার মধ্যে পার্থক্য
ইলেকট্রন আসক্তি | তড়িৎ ঋণাত্মকতা |
১.গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণু প্রত্যেকে একটি করে এক মোল ইলেকট্রনের যথে যুক্ত হয়ে গ্যাসীয় বিচ্ছিন্ন এক মোল একক লাহকে চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি সে। এর একক kJ/mol। | ১.কোনো সমযোজী যৌগের অণুতে উপস্থিত দুটি ভিন্ন মৌলের পরমাণুর মধ্যে শেয়ারকৃত বন্ধন ইলেকট্রন যুগলকে একটি পরমাণু কর্তৃক নিজের দিকে অধিক আকর্ষণ করার তুলনামূলক ক্ষমতাকে ঐ মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে। এর কোনো একক নেই। |
২.ইলেকট্রন আসক্তি মৌলের বিচ্ছিন্ন পরমাণুর ধর্ম। এর মান নির্দিষ্ট। যেমন, ১ এর ইলেকট্রন আসক্তির মান 2.07 eV atm বা 200 kJ mol¹.e-96.49 kJ
) |
২.তড়িৎ ঋণাত্মকতা কোনো যৌগে উপস্থিত মৌলের পরমাণুর ধর্ম। এ মান বিভিন্ন যৌগে বিভিন্ন হতে পারে। SF, ও SCI₂ যৌগে S এর তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান ভিন্ন হয়। |
৩.ইলেকট্রন আসক্তির কারণে কোনো মৌলের পরমাণুএক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। যেমন, Cl(g)+e~CI– ;∆H =-348.8 kJ/mol F(g)+e~F–; ∆H=-328.8 kJ/mol |
৩.তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাবে সমযোজী বন্ধন অংশগ্রহণকারী পরমাণুদ্বয়ের মধ্যে আংশিক ধনাত্বর ও আংশিক ঋণাত্মক চার্জের উদ্ভব ঘটে। যেমন, H$+-F$-, H$+-C$- |
৪.ইলেকট্রন আসক্তি মৌলের আয়নিক বন্ধন সৃষ্টির পূর্বের ঘটনা। | ৪.তড়িৎ ঋণাত্মকতা সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুদ্বয়ের বন্ধনে অংশগ্রহণ করার পরের ঘটনা। |
৫.একই পর্যায়ের মৌলের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন আসক্তির মান বাম থেকে ডানদিকে সাধারণত বৃদ্ধি পায়, 17 তম গ্রুপে গিয়ে এ মান সর্বোচ্চ হয়ে 18 তম গ্রুপে গিয়ে হঠাৎ করে শূন্য হয়। যেমন Na (52.7), P (72), S(-200), C1 (-349), Ar(0) | | ৫.একই পর্যায়ের মৌলের ক্ষেত্রে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বাম থেকে ডানদিকে বৃদ্ধি পায় এবং 18 कर গ্রুপে গিয়ে শূন্য হয়ে যায়। যেমন N(3.04) O(3.44), F(3.98), Ne(0) | |
৬.মৌলের ইলেকট্রন আসক্তির মান বিভিন্ন মৌলের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ মান ধনাত্মক, ঋণাত্মক এমন কী শূন্য হতে পারে। যেমন- অক্সিজেনের প্রথম ইলেকট্রন আসক্তির মান 142, দ্বিতীয় ইলেকট্রন আসক্তির মান 844, F এর ক্ষেত্রে329. He এর ক্ষেত্রে 0, Be এর ক্ষেত্রেও হয়। | ৬.মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান সব সময় সাধারণত ধনাত্মক হয়। যেমন N (3.04), O(3.44), F(3.98) তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান ঋণাত্মক হয় না। |
৭.তড়িৎযোজী বন্ধন সৃষ্টির সময় এবং রেডক্স বিক্রিয়ার সময় মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি কার্যকর হয়। এসব বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃতভাবে কম ইলেকট্রন আসক্তি সম্পন্ন পরমাণু থেকে ইলেকট্রন অধিক ইলেকট্রন আসক্তি সম্পন্ন পরমাণুতে স্থানান্তর ঘটে। | ৭.সমযোজী বন্ধন গঠনের পর তড়িৎ ঋণাত্মকর কার্যকর হয়। বন্ধন ইলেকট্রন জোড় অপেক্ষাকৃত অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের পরমাণুর দিকে যেম করে বা অধিক মাত্রায় আকর্ষিত হয়। ফলে সমযোজ বন্ধনে আংশিক ৪ ও ৪ আধানের সৃষ্টি হয়। |
আরো বিস্তারিত :
1 thought on “ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতার মধ্যে পার্থক্য”